দরিদ্র হাসির মুখে হাসি থাকবে তো!
প্রথম পাতা » ক্যাম্পাস » দরিদ্র হাসির মুখে হাসি থাকবে তো!
প্রাইমডেস্ক: দরিদ্রকে জয় করে হাসির মুখে ফুটল হাসি। এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। তবে তার মুখের এ হাসি থাকবে তো! কলেজে ভর্তি করাতে একসঙ্গে এত টাকা ও উচ্চশিক্ষা চালিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা এ পরিবারের নেই।
ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার শ্যামগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শাখা থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় খাদিজা আক্তার হাসি।
উপজেলার সিধলা ইউনিয়নের বালিয়াপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র দিনমজুর আবুল হাসিমের কন্যা হাসি।
আবুল হাসিম জানান, আমার মেয়ে পড়েছে শ্যামগঞ্জ মডেল হাইস্কুলে। এ স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ১০ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াতে এক টাকাও ফিস নেয়নি। ফরম পূরণেও সহযোগিতা করেছে। তবে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়েছে শ্যামগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে।
তিনি আরও জানান, সিধলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হারুন অর রশিদ স্যার, সব সময় সাহস দিতেন, বই কিনে দিতেন, মেয়ে আসা-যাওয়ার খরচও দিতেন। এ সহযোগিতা পাওয়ার কারণে মেয়েটা এসএসসি পরীক্ষা দিতে পেরেছে। আমার লেখাপড়া করানোর মতো কোনো সামর্থ্য নেই।
দিনমজুর আবুল হাসিমের মাথাগোঁজার জন্য রয়েছে মাত্র ৪ শতাংশ জমি। সেই জমিতে টিনের একটি ঘর হেলে-দুলে পড়ছে। প্রচণ্ড রোদের উত্তাপ আর ছিদ্র দিয়ে আলোকরশ্মি অনায়াসে খেলা করছে হাসিদের ঘরে। এমন ঘরেই হাসি-খুশি আর আনন্দরা বাস করে। নিজের বাড়ি থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার হেঁটে আসে স্কুলে। হাসি জীবনযুদ্ধে হার না মানা ‘এক শিশুযোদ্ধা।’
প্রথম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে মা নিলুফা আক্তারকে হারায় হাসি। তখন ছোট ভাই জুনাঈদ আনন্দ সিয়ামের বয়স মাত্র ৭ দিন। ছোট বোন জমিলা আক্তার খুশির বয়স ৩ বছর। মায়ের শূন্যতায় হাসি, খুশি আর আনন্দের জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে উঠে। অন্যের জমিতে সারাদিন কাজ করেন ওদের বাবা আবুল হাসিম; যা আসে তা দিয়েই ৩ সন্তানের মুখে আহার জোটে। বাবা চলে গেলে দুই ভাইবোনকে সামলানোর পুরো দায়িত্বটা পড়ে যায় হাসির ওপর। শৈশবেই মাতৃছায়ায় পরিণত হয় এই হাসি।
তিনবেলা খাবার তৈরি আর ওদেরকে খাওয়াতে হয় নিয়মিত। একজন শিশুর কোলে দুটি শিশু ঘুমায়! যা প্রতিবেশীদেরও বিস্মৃত করেছে!
সিয়াম এখন বালিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র আর খুশি পড়ছে কবুলেন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে। নিত্যদিন ওদের বিদ্যালয়ে পাঠানোর উপযোগী করতে গিয়ে নিজের ক্লাসে বিলম্বে পৌঁছতে হয়েছে। মাথানিচু করে শিক্ষকের শাসন ও কড়া চোখ রাঙানো মেনে নিয়েই ভাই-বোনের শতভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন করে যাচ্ছে হাসি। লেখাপড়ায় মনোযোগ, শৃঙ্খলা মেনে চলা, সুন্দর হাতের লেখা শিক্ষকদের আদরের ছাত্রীতে পরিণত হয় ‘হাসি।’
জিপিএ-৫ পাওয়ায় হাসি-খুশি আর আনন্দের সঙ্গে বাবা আবুল হাসিমও আবেগাপ্লুত। শঙ্কায় সেই আবেগ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তিন সন্তানের খাবার দিতে গিয়ে প্রবল বর্ষণেও তিনি কাজের সন্ধানে বেড়িয়েছেন, প্রচণ্ড শীতেও একদিন ঘরে বসে থাকতে পারেন নাই। ‘হিট অ্যালার্ট’-এর ভিতরে অন্যের খড় শুকাচ্ছেন, ধান কাটছেন। হাসিকে এখন কলেজে ভর্তি করাতে একসঙ্গে এত টাকা, নতুন পোশাক এসব ভাবনায় মুখে থাকা আবুল হাসিমের রাজ্যজয়ের (কন্যা হাসির জিপিএ-৫) হাসি ম্লান হয়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে শ্যামগঞ্জ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাদিজা আক্তার জানান, হাসির ফলাফলে আমরাও আনন্দিত। সে যে লড়াইটা করেছে সত্যিই জীবনযুদ্ধে জয়ী। এ বয়সে দুজন ভাইবোনকে নিয়মিত বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে আর নিজে স্কুলে আসা, অনেক কষ্টের কাজ, যা তার পক্ষে সম্ভব হয়েছে। এ বিজয় ধরে রাখা ওর পরিবারের জন্য সত্যিই খুব কঠিন!